শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন

ভারতে তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২৪ মার্চ মঙ্গলবার রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি। তার ভাষায়, ‘মধ্যরাত থেকে দেশজুড়ে লকডাউন। ভারতবাসীকে রক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ।’

ভারতে সরকারি হিসাবেই এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫১৯। এর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার এ নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মোদি।

মোদি জানান, ২৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই লকডাউন কার্যকর থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ভারতের কোনও নাগরিকের বাড়ির বাইরে পা রাখা উচিত হবে না।

২১ দিন দীর্ঘ সময়। কিন্তু এই লকডাউন না মানলে দেশ ২১ বছরের জন্য পিছিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন মোদি।

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নয়, আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে এমন অনুরোধ করছি। এই কয়েকটা দিন বাইরের জীবন ভুলে যান।’

করোনার প্রভাবে ইতিমধ্যেই বিচ্ছ্ন্নিভাবে ভারতের একাধিক রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও কারফিউ জারি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা দিলেন মোদি।

রাতে মোদি ভাষণের আগে এদিন দুপুরেই বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি কোনও রকম চার্জ ছাড়া যে কোনও ব্যাংকের এটিএম থেকে নগদ অর্থ তোলায় ছাড় দেওয়া হয়।

করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৫ হাজার কোটি রুপির প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন মোদি। এই টাকায় আইসোলেশন ওয়ার্ড, আইসিইউ, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ দিনের লকডাউন দীর্ঘ সময়। কিন্তু আপনাদের জীবন আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস প্রত্যেক ভারতবাসী সরকারের নির্দেশ মেনে চলবেন। আশা করি খুব শিগগিরই এই সংকট থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো।

তিনি বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই সংকটের সময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন না। আমার বিশ্বাস প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিক সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলবেন।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই সংকটের সময় নানা রকম গুজবও ছড়াচ্ছে। এই ধরনের গুজব ও কুসংস্কার এড়িয়ে চলুন। শুধুমাত্র কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে চলুন।

তিনি বলেন, এই সংকটের সময়ে সব রাজ্যগুলোকে স্বাস্থ্য পরিষেবাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে মজবুত করতে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। এতে আইসোলেশশন বেড, আইসিইউ, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়ানো যাবে। একইসঙ্গে মেডিক্যাল ও প্যারামেডিক্যাল প্রশিক্ষণের কাজও গতি পাবে।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো নিরন্তর কাজ করে চলেছে। আপনারা যাতে সব জরুরি পরিষেবা পান, তা সুনিশ্চিত করতে সবাই একজোট হয়ে কাজ করছে। আপনাদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। পরিবার-পরিজনদের ফেলে রাস্তায় নেমে কাজ করছে পুলিশ। তারা আপনাদের রাগ-অভিমান সহ্য করছেন। তাদের কথা ভাবুন।

তিনি বলেন, আপনাদের কাছে হাতজোড় করে প্রার্থনা করছি, জীবন বাজি রেখে যারা কাজ করে চলেছেন, সেই ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক্যাল কর্মী, হাসপাতাল কর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের জন্য প্রার্থনা করুন।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত এখন এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে যেখানে আমাদের সবাইকে সংযম বজায় রাখার সংকল্প নিতে হবে। প্রাণ থাকলে তবেই দেশ থাকবে। করোনা থেকে বাঁচার একটাই উপায়, সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট করবেন না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও ইতালির মতো দেশগুলোর স্বাস্থ্য পরিষেবা খুবই উন্নত। তা সত্ত্বেও করোনার মোকাবিলা করতে পারেনি তারা। এই পরিস্থিতিতে উপায় কি? একটাই উপায়, যারা করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া। ওই সব দেশে সরকারের কথা শুনে সাধারণ মানুষ বাড়ির বাইরে বেরোননি। আমাদেরও তা মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুরুতে দেখলে বোঝাই যায় না। তাই বাড়িতে থাকুন। কেউ রাস্তায় বেরোবেন না। মনে রাখবেন বাড়ির সীমারেখার বাইরে পা রাখলেই করোনার মতো মহামারিকে বাড়িতে ডেকে আনবেন। তাই এই কয়েকটা দিন বাইরের জীবনকে ভুলে যান। যে যেখানে রয়েছেন সেখানেই থাকুন। প্রত্যেক ভারতীয়, প্রত্যেক পরিবারকে বাঁচানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ ভাবছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা শুধু আক্রান্তদের জন্যই প্রযোজ্য। এই ধারণা ভুল। প্রত্যেক পরিবারের জন্যই এই দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন। এছাড়া করোনার থেকে বাঁচার আর কোনও উপায় নেই। সূত্র: আনন্দবাজার, এনডিটিভি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com